টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
গোডাউনে পচছে কোটি টাকার পণ্য
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৭-০৭-২০২৫ ১২:৫৩:৩৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৭-০৭-২০২৫ ১২:৫৩:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
এক সময় বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের মাধ্যমে সীমান্ত বাণিজ্য ব্যাপক জমজমাট ছিল। শতশত শ্রমিকের ব্যস্ততা ও ব্যবসায়ীদের আনা-গোনায় মুখর ছিল বন্দর। তবে গত সাড়ে তিনমাস ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। ফলে শ্রমিকরা কর্মহীন, ব্যবসায়ীরা বিপাকে। বন্দরের গোডাউনে পড়ে আছে কোটি টাকার পণ্য।
টেকনাফ বন্দরের আমদানিকারকরা জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে দু’দেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি চলে আসছে। যার মধ্যে মিয়ানমার থেকে আমদানি হচ্ছে হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, পেঁয়াজ, বিভিন্ন ধরনের আচার, তেঁতুল ও প্লাস্টিক। রপ্তানি মালামালের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, আলু, দেশীয় কাপড়, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের পাইপ ও চুল। কিন্তু বিগত বছর থেকে মিয়ানমার অভ্যন্তরে দেশটির সরকার বাহিনী ও বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত শুরু হলে তার প্রভাব পড়তে থাকে এই বন্দরে। এতে করে এক পর্যায়ে টেকনাফ বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের মংডু, আকিয়াবসহ সর্বশেষ ইয়াঙ্গুন বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
মিয়ানমারের রাখাইন সীমান্ত আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর থেকে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়। একাধিকবার আরাকান আর্মি নাফ নদীতে মাল বোঝাই ট্রলার আটকানোসহ বাধা সৃষ্টি করে। সেক্ষেত্রে ধীরে ধীরে উভয় দেশের সীমান্ত বাণিজ্যের মধ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। তাতে করে সাড়ে তিনমাস ধরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে এপারের টেকনাফ বন্দরে কোটি কোটি টাকার আলু-সিমেন্ট গোডাউনে পড়ে রয়েছে। সেসব আলুতে পচনও ধরেছে। ওপারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল ও টাকা আটকে রয়েছে।
টেকনাফ বন্দরে আমদানি-রপ্তানি আবার কবে চালু হবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কেউ জানাতে পারেনি। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে সীমান্ত বাণিজ্য। বেকার হয়ে পড়েছেন দেড় হাজার শ্রমিক। কয়েকশ ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহেতাশামুল হক বাহাদুর বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধের কারণে বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি চালুর বিষয়টি এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে আবারো সীমান্ত বাণিজ্য চালু করা যায়। মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সেদেশের সরকার থেকে কোনো বাঁধা নেই। মূলত সমস্যা আরাকান আর্মি। তিনি আরও বলেন, আমরা কক্সবাজার জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও এ বিষয়ে দরখাস্ত দিয়েছি। পরবর্তী কী সিদ্ধান্ত আসে তার অপেক্ষায় আছি। বর্তমানে বন্দরের গোডাউনে পড়ে আছে কোটি টাকার আলু ও সিমেন্ট, আলুতে পচন ধরেছে।
টেকনাফ বন্দরের শ্রমিক কামাল হোসেন বলেন, কাজ করতে না পারলে সংসার খরচ জোগাড় হয় না। আমি নিয়মিত বন্দরে কাজ করতাম। এখন বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। দেড় হাজার শ্রমিক এই বন্দরে কাজ করতো। বলতে গেলে এখন সবাই বেকার হয়ে পড়েছে। টেকনাফ বন্দরের ব্যবস্থাপক জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সীমান্ত বাণিজ্যে প্রভাব পড়ে। মালবোঝাই ট্রলার বন্দরে আসার সময় নাফ নদীতে আরাকান আর্মি সমস্যা সৃষ্টি করায় বন্দরের ব্যবসায়ীরা মালামাল আমদানি-রপ্তানি করতে পারছে না। গত এপ্রিল মাস থেকে এই পর্যন্ত টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের আমাদানি-রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ।
টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ বলেন, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধে কোনো নোটিশ তারা পাননি। তবে গত ২২-২৩ অর্থ বছরের ৬৪০ কোটি টাকা এবং ২৩-২৪ অর্থ বছরের ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হওয়া টেকনাফ স্থলবন্দরে গেলো সাড়ে তিন মাসে কোনো রাজস্ব সরকার পায়নি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, বন্দরের আমাদানি-রপ্তানি বন্ধের এ সমস্যা নিয়ে গত এক মাস আগেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মিটিং হয়েছে। বন্দরের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে সর্বোচ্চ মহলে জানানো হয়েছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স